আমরা এই আর্টিকেলে নিচের বিষয়গুলি এক এক করে জানবো-বজ্রপাত কি ? বজ্রপাত কেন হয় ? বজ্রপাত থেকে বাঁচার উপায় ? বজ্রপাত কি সত্যি ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জামগুলিকে ড্যামেজ করতে পারে? কীভাবে বজ্রপাত ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জামগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে?
বজ্রপাত থেকে কীভাবে নিজেকে এবং আপনার ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসগুলিকে সুরক্ষিত রাখবেন?বজ্রপাতের সময় স্মার্টফোনের সুইচড কি অফ করে দেওয়া উচিৎ ?
বজ্রপাত কী এবং বজ্রপাত কেন হয় ?
যখন ভারী বৃষ্টিপাত হয় তখন আপনি আকাশে আলোর ঝলকানি দেখেন ও কিছু পরে একটা বিশাল বজ্রধ্বনিও শুনতে পান(শব্দের থেকে আলোর বেগ বেশি তাই আলো আগে দেখেন; পরে শব্দ)। একেই বজ্রপাত বলে।
এই সময় অবশ্যই আপনাকে সর্বদা ঘরের মধ্যে নিরাপদে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।
বজ্রপাত কেন হয় ?
আলোর এই ঝলকানি সহ বজ্রধ্বনি আসলে বিদ্যুতের ক্ষরণ(discharge of electricity) ছাড়া আর কিছুই নয়।যে বিদ্যুৎশক্তি বিশাল বিশাল মেঘের চাঁইয়ের সঙ্গে পারস্পরিক ধাক্কায় সৃষ্টি হয় যা পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে প্রশমিত বা নিউট্রাল হওয়ার জন্য।
সুতরাং আসুন আমরা দেখি এই বজ্রপাতের প্রভাবগুলি কি এবং জানবো আমাদের বৈদ্যুতিক সরঞ্জামগুলিকে এই বজ্রপাত কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং কীভাবে এই ক্ষতির থেকে সরঞ্জামগুলিকে রক্ষা করবো।
বজ্রপাত পিক :
একটি ভয়ংকর সুন্দর বজ্রপাত পিক দেওয়া হল -
কীভাবে বজ্রপাত ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জামগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে?
প্রথমের বলেছি, বজ্রপাত বিশাল পরিমান বিদ্যুৎ শক্তির ক্ষরণ বা ডিসচার্জ ছাড়া আর কিছুই না।
তার জন্য সে একটি মাধ্যম খোঁজে পৃথিবী পৃষ্ঠে যত তাড়াতাড়ি পারে আসার জন্য। তাই পৃথিবী পৃষ্ঠের উপর অবস্থিত বিভিন্ন বস্তুকে আশ্রয় করে এই ডিসচার্জ ঘটে। সোজা কথায় এই বস্তু গুলির উপর বাজ পড়ে।
- 📌এখন যদি বাজ কোনো বিদ্যুৎ পরিবাহকের উপর সরাসরি এসে পড়ে যা হয়ত কিলোমিটার দূরে তবু্ও তার সাথে যুক্ত আপনার বাড়ির বৈদ্যুতিক সরঞ্জামগুলির বিশাল ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।বজ্রপাতে যে বিদ্যুৎ এর ক্ষরণ ফটে তারফলে হাইভোল্টেজ পরিবাহকে মাধ্যমে এসে আপনার ডিভাইসড গুলোকে পুড়িয়ে দিতে পারে।
- 📌এখন যদি এই বজ্রপাত কোনও বস্তুকে(গাছ,বাড়ি,ব্রিজ ইত্যাদি)আঘাত করে তখনও হাই-ভোল্টেজের স্রোত দ্রুত তরঙ্গ মাধ্যমে পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে এগিয়ে গিয়ে ইকুয়ালাইজেশন ঘটায়।এই সময় বিশাল জায়গা জুড়ে একটা চৌম্বক ক্ষেত্র সৃষ্টি করে যা আপনার বৈদ্যুতিক এবং ডাটা যোগাযোগের ক্যাবলকে ইন্ডিউসড বা প্রভাবিত করে। যার দ্বারা আপনার সরঞ্জামগুলিকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে।
এখানে বার বার আমি সম্ভাবনার কথা বলছি কারন আপনার ডিভাইসড গুলি ক্ষতি করার আগেই ইকুয়ালাইজেশন সম্পন্ন হয়ে যেতে আরও হাজার একটা বিষয়ের মাধ্যমে। এটি মিনি সেকেন্ডের ঘটনা।
বজ্রপাত থেকে বাঁচার উপায় ?
আপনার বৈদ্যুতিক সরঞ্জামগুলিতে বজ্রপাতের ইন্ডিউসড হাইভোল্টেজ পৌঁছানো থেকে বিরত রাখার উপায় হিসাবে, পাওয়ার লাইনের থেকে ডিভাইসগুলিকে আনপ্লাগিং করুন। এটাই সর্বোত্তম উপায়।
অবশ্যই, প্রত্যক্ষ বা প্রায় সরাসরি বজ্রপাতের আঘাত থেকে কোন ধরনের সুরক্ষা ক্ষতির থেকে আমাদের বাঁচাতে পারে না।
আরও জানুনঃ অ্যাসিড বৃষ্টি কাকে বলে ? অ্যাসিড বৃষ্টির জন্য কোন গ্যাস দায়ী
বজ্রপাতের সময় নিচের জিনিসগুলি থেকে দূরে থাকুনঃ
- ১)জল(পুকুর,নদী,সমুদ্র ইত্যাদি)
- ২)উচ্চ স্থল
- ৩)উন্মুক্ত স্থান (উদাঃ গল্ফ কোর্স,পার্ক, স্কুল মাঠ, খেলার মাঠ,ফাঁকা ময়দান,কৃষিজমি ইত্যাদি)
- ৪)নির্জন গাছ
বজ্রপাতের সময়, নিম্নলিখিত জিনিসগুলিকে স্পর্শ করা বা তার কাছাকাছি থাকা এড়িয়ে চলুনঃ
- ১) তারযুক্ত টেলিফোন
- ২)বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম
- ৩)বৈদ্যুতিক তার
- ৪)ধাতব বেড়া,অ্যালুমিনিয়াম সিড়ি এবং বিভিন্ন ধাতব জিনিস
- ৫)ধাতব দরজা ও জানালা
আপনি যদি ঝড়ের কবলে দুর্ভাগ্যক্রমে পড়ে যান, তবে কি করবেন?
যদি কোনো কারনে বজ্রপাতের মধ্যে পড়ে যান, বজ্রপার থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে নিচের বিষয়গুলি মেনে চলুন।
- কোনও নিরাপদ অবস্থান গ্রহণ করুন। যেমন কোন বিল্ডিং বা ধাতব যানবাহন যেমন গাড়ি, ট্রাক বা ভ্যান। এদের জানালা গুলো সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিন।
যদি আশেপাশে কোনও আশ্রয় না থাকে, তবে বজ্রপাত থেকে বাঁচতে নিচের সুরক্ষাগুলি নিশ্চিত করুন।
- ১)সম্ভাব্য সর্বনিম্ন নিচু জায়গায় অবস্থান করুন। মাথা নিচু করুন এবং কান দুটো হাত দিয়ে চেপে রাখুন যাতে কাছাকাছি পড়া প্রবল বজ্রধ্বনি থেকে আপনার কান রক্ষা পায়।
- ২)যদি আপনি কোনও ধাতব জিনিস(ধাতব ব্লেসলেট,সোনা বা রূপার গহনা, তাবিজ ইত্যাদি) পরে থাকেন তবে তৎক্ষনাৎ তা সরিয়ে ফেলুন।
- ৩)অন্যান্য ব্যক্তির খুব কাছাকাছি থাকা এড়িয়ে চলুন (সর্বনিম্ন 15 ফুট দূরে থাকুন)।
লক্ষ্য হবে কোন ভাবেই যেন ইকুয়ালাইজেশনের বা বজ্রপাত ও পৃথিবীর মধ্যে পরিবহন পথের অংশ না হয়ে পড়েন।
আরও জানুনঃ মৃত্তিকা দূষণ কি ও কীভাবে প্রতিকার করা যায়।
বজ্রপাতের সময় স্মার্টফোনের সুইচড কি অফ করে দেওয়া উচিৎ ?
বজ্রপাতের সময় এটি খুব কমন কেউ না কেউ আপনাকে ফোনের সুইচড অফ করার কথা বলবেন।কিন্তু ফ্যাক্ট হল সুইচড অফ করার কোন প্রয়োজন নেই। কারন যে কোনো ওয়্যারলেস ডিভাইড সরাসরি বজ্রপাতের আঘাত ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
তাই স্মার্টফোনের ব্যবহারের কারনেই আপনি বজ্রপৃষ্ঠ হতে পারেন এটা একটা মিথ। বরং উপরের সুরক্ষাগুলি না নিলে আপনি বজ্রপৃষ্ঠ হতে পারেন।বজ্রপৃষ্ঠ হলে মানুষের শরীরে পাশাপাশি সঙ্গে থাকা যে কোনো বস্তুই পুড়ে যায়।
তবে আপনার মোবাইল যেন কোনো ভাবেই বাইরের পরিবাহকের সাথে যুক্ত না থাকে অর্থাৎ চার্জিং বা প্লাগিং না থাকে। এবং কোনো মেটালিক ফোন কভার না ব্যবহার করাই ভালো।