মেগাস্থিনিস কে ছিলেন ও তাঁর ভারত বিবরণ

গ্রীক পর্যটক মেগাস্থিনিস নামটি তাঁর ভারত বিবরণের জন্যই আমাদের কাছে সমধিক পরিচিত। মেগাস্থিনিস কে ছিলেন ও মেগাস্থিনিসের ভারত বিবরণ নিয়ে কী জানা য়ায় ?  

মেগাস্থিনিস কে ছিলেন ? 

মেগাস্থিনিসের ব্যক্তিপরিচয় তথা জীবন সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানা যায় না। তবে যেটুকু জানা যায় তার মধ্যে,  খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের শেষদিকে মেগাস্থিনিস ভারতে এসেছিলেন গ্রীক শাসক সেলুকাসের মৈত্রীদূত রূপে।

সেলুকাস ছিলেন গ্রীক সম্রাট আলেকজান্ডারের সেনাপতি। ভারতের উত্তর- পশ্চিম সীমান্ত বিজয়ের পরেই দেশে ফেরার পথে আলেকজান্ডারের মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুর পর বিশাল সাম্রাজ্য সেলুকাস, অ্যান্টিগোনাস, টলেমি প্রভৃতি সেনাপতিগণ নিজেদের মধ্যে বিভক্ত করে নেন।

মেগাস্থিনিস কে ছিলেন

মেগাস্থিনিসের জীবনী :

পাশ্চাত্য লেখকরা কেউই মেগাস্থিনিসের জীবন সম্পর্কে বিশেষ কিছু বলে যাননি। যেটুকু জানা যায় তা অতি সামান্য এবং এ পর্যন্ত সেটুকুই প্রচারিত হয়েছে।

বর্তমান খোরাসান এবং তার পার্শ্ববর্তী স্থানসমূহ নিয়ে সেইকালে গড়ে উঠেছিল আরাকোসিয়া সাম্রাজ্য। সেলুকাস আরাকোসিয়ার শাসনকর্তা সিবিরটায়সের কাছে প্রথমে তাঁর দূত করে পাঠিয়েছিলেন মেগাস্থিনিসকে।

এখানে তিনি বেশ কিছুদিন বসবাস করেছিলেন। এরপর ঘটে গেল রাজনৈতিক পালাবদল। ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত নিজ অধিকারে নিয়ে আসেন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য। পরাজিত সেলুকাস মৈত্রী বন্ধনে আবদ্ধ হলে আরাকোসিয়া থেকে তাঁর দূত মেগাস্থিনিসকে প্রেরণ করেন মগধের রাজধানী পাটলিপুত্রে।

উনবিংশ শতাব্দীর জার্মান পণ্ডিত সোয়ানবেক জানিয়েছেন মেগাস্থিনিস দীর্ঘকাল ভারতে বসবাস করেছিলেন। তবে অনেকে মনে করেন, মেগাস্থিনিস দুবার পাটালিপুত্রে এসেছিলেন।যদিও এই মন্তব্যের সপক্ষে কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায় নি।

মেগাস্থিনিসের ভারত বিবরণ :

ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে গ্রীক অধিকৃত অঞ্চলসমূহ সেলুকাসের অধিকারভুক্ত ছিল। মগধের সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য সেলুকাসকে যুদ্ধে পরাজিত করে ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত পর্যন্ত নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করে নিয়েছিলেন।

পরাজিত সেলুকাস চন্দ্রগুপ্তের সঙ্গে সন্ধি ও মৈত্রী স্থাপন করেন। তিনি নিজ কন্যাকে সম্রাটের সঙ্গে বিবাহ দেন। উপঢৌকন হিসাবে চন্দ্রগুপ্ত লাভ করেন আরও কিছু গ্রীক অধিকৃত অঞ্চল। সেলুকাস পরে মৈত্রীর দূত রূপে জ্ঞানী ও সরল হৃদয় লেখক মেগাস্থিনিসকে চন্দ্রগুপ্তের রাজধানী পাটালিপুত্রে প্রেরণ করেন।

মেগাস্থিনিস বহুকাল ভারতে ছিলেন। তাঁর ভারত ভ্রমণের যে বিবরণ তিনি লিপিবদ্ধ করেন তাই "Ta Indica" বা ভারত বিবরণ নামে পরিচিত। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা হল, মেগাস্থিনিসের গ্রন্থটি বহু পূর্বেই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। 

কিন্তু পাশ্চাত্য লেখকরা ভারত সম্বন্ধে আলোচনার ক্ষেত্রে মেগাস্থিনিসের গ্রন্থ থেকে কিছু কিছু উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছিলেন। এই উদ্ধৃতি অংশ সংগৃহীত হয়ে পরবর্তী সময়ে মেগাস্থিনিসের ভারত বিবরণ নামে প্রচারিত হয়েছে। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ বিবরণ কখনই পাওয়া যায় নি।

মেগাস্থিনিসের বিবরণ পড়ে তিনি ভারতের কোন কোন অঞ্চলে অবস্থান করেছিলেন সেবিষয়ে কিছু জানা যায় না। সেলুকাসের নির্দেশ পেয়ে তিনি আরাকোসিয়া থেকে ভারত অভিমুখে যাত্রা করেন।

এই পথের বিবরণীতে সিন্ধুনদ থেকে রাজপথে পাটলিপুত্র ও পাটালিপুত্র থেকে গঙ্গার মুখ পর্যন্ত অঞ্চলের অত্যন্ত জীবন্ত বর্ণনা পাওয়া যায়। এরপর হিমালয় থেকে তাম্রপর্ণী পর্যন্ত যে বিস্তৃত ভূভাগের বিবরণ পাওয়া যায় স্পষ্টতই বোঝা যায় তা তাঁর লোকমুখে শোনা, প্রত্যক্ষ দর্শনের বর্ণনা নয়।

মৈত্রীসূত্রে রাজঅতিথি রূপেই মেগাস্থিনিস পাটলিপুত্রে অবস্থান করেছিলেন। সম্ভবতঃ বর্ষাকালেই তিনি এখানে উপস্থিত হয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, ভারতবর্ষে ১১৮ টি জাতির মানুষ বসবাস করে।

গুণাগুণ বিচারে তিনি ভারতবাসীদের সাতটি ভাগে বিভক্ত করেন। এই বিভাগগুলি হল, পন্ডিত ও দার্শনিক, কৃষক, গরু ও মেষপালক, শিল্পী-ইত্যাদি, যোদ্ধা, পর্যবেক্ষক ও মন্ত্রী।

তিনি বলেছেন, ভারতবর্ষের বেশিরভাগ ভূখন্ডই সমভূমি এবং সর্বত্র রয়েছে অগণিত সমৃদ্ধ নগর। তাঁর এই মন্তব্য থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে মেগাস্থিনিস কেবলমাত্র সমভূমি অঞ্চলেই পরিভ্রমণ করেছিলেন।

তিনি বলেছেন, এখানকার মাটি অত্যন্ত উর্বর। ফলে সর্বত্র অপরিমিত ফসল উৎপাদিত হয়। প্রধান ফসল যব ও ধান। বছরে দুবার ফসল তোলা হয়। শীতকালে যে সব ফসল উৎপাদিত হয় তার মধ্যে প্রধান হল ডাল, গোধূম, তিল ইত্যাদি। কৃষকেরা উৎপন্ন ফসলের এক চতুর্থাংশ বা এক ষষ্ঠমাংশ কর হিসাবে রাজভান্ডারে জমা দেয়।

পাটলিপুত্র আসার পথে ভারতের বিপুল অরণ্য সম্পদ, বিচিত্র পশুপাখিবদেখে মুগ্ধ হন মেগাস্থিনিস। তাঁর বিবরণে শাল, সেগুন, তাল, বিশাল, বেত ইত্যাদি বৃক্ষের এবং হাতি, বানর, কুকুর, এক শৃঙ্গ বিশিষ্ট হরিণ ও অশ্বের কথা পাওয়া যায়। এছাড়াও বহু পশুপাখি ও মাছের নাম উল্লেখ করেছেন তিনি। 

বঙ্গদেশের বাঘেরও উল্লেখ করেছেন মেগাস্থিনিস। সম্ভবতঃ গঙ্গার উপকূল ধরে তিনি বঙ্গদেশের প্রান্তে এসেছিলেন এবং সেই সময় অরণ্যে বাঘ তাঁর চোখে পড়ে।

ভারতবর্ষের ধাতু সম্পদের সমৃদ্ধির কথাও উল্লেখ করেছেন মেগাস্থিনিস। তিনি লিখেছেন, ভারতবাসীরা খনি থেকে সোনা, রূপা, লোহা, তামা প্রভৃতি ধাতু আহরণ করে।

লোহা ও তামা দিয়ে যুদ্ধাস্ত্র তৈরি হয়। সোনা রূপা দিয়ে অঙ্গাভরণ তৈয়ারী হয়। ভারতের পুরুষ বিশেষ করে মহিলারা অত্যন্ত অলঙ্কারপ্রিয়। তিনি আরও লিখেছেন, লোহা টিন ও তামা দিয়ে গৃহস্থালীর প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম তৈরি করা হত।

মেগাস্থিনিস ভারতবাসীদের সোনা সংগ্রহের যে কাহিনীটি উল্লেখ করেছেন তা বড় অদ্ভুত। তা থেকে মনে হয় তিনি প্রচলিত লোককথা থেকে এই কাহিনীটি সংগ্রহ করেছেন, নিজে সোনা সংগ্রহের পদ্ধতিটি প্রত্যক্ষ করেন নি। যা শুনেছিলেন সরলভাবে তাই হুবহু লিপিবদ্ধ করেছেন।

মেগাস্থিনিস লিখেছেন, খনি থেকে সোনা সংগ্রহের কাজটি করে মানুষ নয় বিশালকায় এক জাতীয় পিপীলিকা। এই পিপীলিকাদের আকৃতি শেয়ালের মতো এবং এরা অত্যন্ত হিংস্র প্রকৃতির।

এই পিপীলিকারা খনিমুখে গর্ত করে বাস করে। গর্ত খোঁড়ার সময় এরা যে মাটি স্তূপ করে রাখে এর সঙ্গেই মিশে থাকে সোনা। কৌশলে এই মাটি সংগ্রহ করে সোনা আলাদা করে নিতে হয়।

অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে খনিমুখ থেকে মাটি সংগ্রহ করতে হয়। তা না হলে হিংস্র পিপীলিকাদের আক্রমণে প্রাণ হারাতে হয়। মগধের রাজধানী পাটলিপুত্রে অবস্থানকালে মেগাস্থিনিস নগরটিকে খুটিয়ে দেখেছিলেন। 

আরও জানুন: রসায়নের জনক কে ছিলেন ? 

গঙ্গা ও শোন নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত পাটলিপুত্র নগরের দৈর্ঘ্য ছিল দশ মাইল; প্রস্থ দুই মাইল। কাঠের প্রাচীর দিয়ে সমগ্র নগরটি বেষ্টিত ছিল। এই প্রাচীরের ওপরে গম্বুজের সংখ্যা ছিল ৫৭২ এবং তোরণ ছিল ৬৪ টি। 

নগর বেষ্টনকারী প্রাচীরের গায়ে সারি সারি রন্ধ্র ছিল। বহিঃশত্রুর আক্রমণ ঘটলে এই রন্ধ্র পথে তীর নিক্ষেপ করা হত। কাষ্ঠ প্রাকার ছাড়াও নগরটিকে সুরক্ষিত করার জন্য পরিখা খনন করা হয়েছিল। সুবিন্যস্ত পয়ঃপ্রণালী পথে নগরের দূষিত জল পরিখায় এসে পড়ত। নগরটি ছিল অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন ও সুসজ্জিত।

ভারতবাসীদের জীবনযাত্রা লক্ষ্য করে মেগাস্থিনিস লিখেছেন, জনগণের প্রধান দুই উপাস্য দেবতা ছিল শিব ও কৃষ্ণ। কৃষ্ণ ও শিবের পরিধেয়, বাসস্থান, স্বভাব, ক্ষমতা ও যুদ্ধকৌশল ইত্যাদির সাদৃশ্য দেখে তাঁর মনে হয়েছে তাঁরা একই দেবতা।

ভারতীয় ব্রাহ্মণদের সংস্পর্শে এসে তাদের জ্ঞানের গভীরতা দেখে তিনি বিস্মিত হয়েছিলেন।ভারতীয় পন্ডিত সমাজকে মেগাস্থিনিস ব্রাহ্মণ ও শ্রমণ এই দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। মেগাস্থিনিস তাঁর বিবরণে বৌদ্ধ শব্দটি কোথাও ব্যবহার করেন নি। কিন্তু তবুও বৌদ্ধ শ্রমণদের কথাই তিনি উল্লেখ করেছেন তাঁর বিবরণে। সেইকালে বৌদ্ধ শ্রমণরাও উচ্চ জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন।

ব্রাহ্মণদের মত ও বিশ্বাসের কথাও উল্লেখ করেছেন মেগাস্থিনিস। ব্রাহ্মণগণ বিশ্বাস করতেন বিশ্বের মূল উপাদান পাঁচটি— ক্ষীতি, অপ, তেজ, মরুৎ ও ব্যোম বা আকাশ। গ্রীকগণ চারটি উপাদনের কথা জানতেন, ব্যোম বা আকাশ যে পঞ্চভূতের একটি তা তাঁরা জানতেন না । মেগাস্থিনিস জানিয়েছেন, ভারতের পন্ডিতরা মহাকাশ চর্চা করতেন।

ভারতীয়দের জীবনযাত্রা প্রণালীর প্রভূত প্রশংসা করেছেন তিনি। তিনি জানিয়েছেন, ভারতীয়রা মৃত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করত না। ব্যক্তিমানুষের গুণকীর্তনকেই তারা স্মৃতি রক্ষার প্রকৃষ্ট উপায় বলে বিশ্বাস করত।

ভারতবাসীদের জীবন ছিল সংযত ও শৃঙ্খলাবদ্ধ। আড়ম্বর বা অতি আহার তাঁরা পছন্দ করত না। দেশে চুরি, ডাকাতি প্রায় ছিলই না। সাধারণ অবস্থায় কেউ মদ্যপান করত না। যজ্ঞাদির সময়েই কেবল মদ্যপান করা হত। সহজ সরল জীবনেই ভারতবাসীরা অভ্যস্থ ও সুখী ছিল।

ভারতীয়দের সৌন্দর্যপ্রিয়তার কথা মেগাস্থিনিস তাঁর বিবরণীতে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। নিজেদেরও তাঁরা সুন্দরভাবে সজ্জিত রাখত। এই উদ্দেশ্যেই তাঁরা অলঙ্কার ইত্যাদি ব্যবহার করত। সত্য ও ধর্মকে ভারতবাসী সকলের ওপরে স্থান দিত। তাদের মধ্যে বহুবিবাহ প্রথা প্রচলিত ছিল।

মেগাস্থিনিস চন্দ্রগুপ্তের শিবিরেও বাস করেছেন। বলেছেন, সেখানে চার লক্ষ লোক অত্যন্ত শৃঙ্খলার সঙ্গে বাস করত। তাদের শৃঙ্খলাপরায়ণতা তাঁকে বিস্মিত করেছিল। রাজার রাজ্যশাসন প্রণালীর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি। ভোগ বিলাসের জন্য রাজা রাজ্যশাসন করতেন না। তাঁর জীবনও ছিল আড়ম্বরহীন ও বাহুল্যবর্জিত। প্রজাপালন রাজার আদর্শ ছিল।

মেগাস্থিনিস জানিয়েছেন, লিখন পদ্ধতি ভারতবাসীদের জানা ছিল না। স্মৃতির ওপর নির্ভর করেই তারা যাবতীয় কর্ম সম্পাদন করত। তিনি আরও জানিয়েছেন, প্রত্যেক ভারতবাসীই ছিল স্বাধীন। তারা কাউকে ক্রীতদাস করে রাখত না। অতিথিবৎসল ভারতীয়রা পরদেশীদের সম্মান ও মর্যাদা দিত।

প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভারত সম্বন্ধে যা জানতে পেরেছিলেন, তাই মেগাস্থিনিস তার বিবরণে লিপিবদ্ধ করেছিলেন। ভারতের ভৌগোলিক অবস্থান, আয়তন, পাহাড়-পর্বত, নদ-নদী, পথঘাট, বন্যজন্তু, প্রাচীন ইতিহাস, দেবদেবী প্রভৃতি সবকিছু তাঁর ভারত বিবরণ গ্রন্থে স্থান পেয়েছে। অনেক বিষয়ে প্রচলিত গল্পকথাকে তিনি সরলভাবে বিশ্বাস করেছেন ও সেভাবেই লিপিবদ্ধ করেছেন।

এই কারণে অনেক ক্ষেত্রেই যুক্তিবহির্ভূত অবিশ্বাস্য কাহিনীর অবতারণা ঘটেছে। ভারতবাসীদের সম্বন্ধে তাঁর ধারণা এমনই উচ্চ ছিল যে, তিনি মনে করেছিলেন, এখানে সবকিছুই সম্ভব। এছাড়া ভাষার ব্যবধানের একটা বাধা তো ছিলই। সব বিষয়ই যে তিনি যথাযথ বুঝতে পেরেছিলেন তা নয়, যেমন বুঝতে পেরেছেন, সেভাবেই লিপিবদ্ধ করেছেন।

ভারতের কয়েকটি জাতির কথা বলতে গিয়ে মেগাস্থিি কোন জাতির মুখ নেই, কোনটির নাক নেই, কোনটির পা মাকড়সার মতো লিকলিকে। আবার কোন জাতির লোকদের কান এমন বিশাল আকৃতির তা স্বচ্ছন্দে শোওয়া চলে। 

ভারতের আরো এক জাতির মানুষের কথা তিনি বলেছেন যাদের পায়ের আঙুল পেছন দিকে। এমন বহু উদ্ভট বিবরণ তাঁর লেখায় পাওয়া যায়। সন্দেহ নেই যে এসব বিবরণ তাঁর সংগ্রহ করা। তিনি যেমন শুনেছেন, বিশ্বাসযোগ্যভাবে তাই লিপিবদ্ধ করেছেন।

একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, মেগাস্থিনিস যখন ভারতে এসেছিলেন, আর্যদের সঙ্গে বিভিন্ন বর্বর জাতির সংঘর্ষ তখনো শেষ হয় নি। আর্যরা এইসব অসভ্য জাতি সম্বন্ধে নানা অবিশ্বাস্য কাহিনী গড়ে তুলেছিল। সেই সব কাহিনী শুনে মেগাস্থিনিস বিশ্বাস করেছিলেন।

কেবল মেগাস্থিনিসই নন, আলেকজান্ডারের সঙ্গে যাঁরা ভারত অভিযানে এসেছিলেন, তাঁরাও এই সব অবিশ্বাস্য কাহিনী শুনে বিশ্বাস করেছিলেন। এত সত্ত্বেও, একথা মানতেই হবে যে মেগাস্থিনিসের ভারত বিবরণের ঐতিহাসিক মূলা কিছু কম নয়। তাঁর এই বিবরণ থেকে অতীত ভারতের এক বিশ্বস্ত চিত্র পাওয়া যায়।

একটি বিশেষ সময়ের চিত্র তিনি আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। সেই সময়ের ভারতকে জানার মতো দ্বিতীয় কোন উপাদান নেই। মেগাস্থিনিসের ভারত ভ্রমণের আর একটি ঐতিহাসিক দিক হল, তাঁর মাধ্যমেই দুই প্রাচীন সভ্য দেশ ভারত ও গ্রীক সংস্কৃতির মিলন সম্ভব হয়েছিল। এই কারণে এই গ্রীক পরিব্রাজকের ব্যক্তি পরিচয় অতীতের অন্ধকারে হারিয়ে গেলেও তাঁর লিপিবদ্ধ অভিজ্ঞতাই তাঁকে আমাদের মধ্যে স্মরণীয় করে রেখেছে।

FAQ :

প্র : মেগাস্থিনিস কবে ভারতে এসেছিলেন ? 

উ: খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের শেষদিকে মেগাস্থিনিস ভারতে এসেছিলেন গ্রীক শাসক সেলুকাসের মৈত্রীদূত রূপে।

প্র: মেগাস্থিনিস কে ছিলেন তার গ্রন্থের নাম কি ? 

উ: গ্রীক পর্যটক মেগাস্থিনিস নামটি তাঁর ভারত বিবরণের জন্যই আমাদের কাছে সমধিক পরিচিত।
তার গ্রন্থের নাম "Ta Indica" বা ভারত বিবরণ।

প্র: মেগাস্থিনিস কার রাজত্বকালে ভারতবর্ষে আসেন ? 

উ: মগধের সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের রাজত্বকালে ভারতে আসেন।

প্র: মেগাস্থিনিস সম্পর্কে টীকা / মেগাস্থিনিস সম্পর্কে একটি টীকা।

প্র: মেগাস্থিনিস কার রাজত্বকালে ভারতে আসেন ? 

উ: মগধের সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য।

প্র: মেগাস্থিনিস কার আমলে ভারতে এসেছিলেন

উ: সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য।

প্র: মেগাস্থিনিসের লেখা গ্রন্থের নাম কি

উ: " Ta Indica " বা ভারত বিবরণ

প্র: মেগাস্থিনিস রচিত ইন্ডিকা গ্রন্থ থেকে

উ: ইন্ডিকা।

প্র: কোন বংশের ইতিহাস জানা যায় ? 

উ: মৌর্য বংশের।

প্র: মেগাস্থিনিস কার আমলে ভারতে আসেন ? 

উ: চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য।

প্র: মেগাস্থিনিসের ইন্ডিকা সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও

প্র: মেগাস্থিনিস এর লেখা বইটির নাম কি ? 

উ: ইন্ডিকা।

প্র: মেগাস্থিনিস কেগ 

প্র: মেগাস্থিনিস কোন দেশের পরিব্রাজক ছিলেন ? 

উ: গ্রিস সাম্রাজ্য। 

প্র: মেগাস্থিনিস কোন দেশ থেকে ভারতে এসেছিলেন

উ: গ্রিস বা গ্রিক দেশ।

প্র: মেগাস্থিনিস কার রাজসভার গ্রিক দূত ছিলেন

উ: চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post